কাহারলক আজাদ তালুকদার – শহরের নতুন নেতা

0
676

আয়ারল্যান্ডের রাজনীতিতে বাংলাদেশি ইমিগ্রান্টদের ইতিহাস নিয়ে যদি কোন বই লিখিত হয় তাহলে সে বইয়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ে লিখিত হবে জনাব আবুল কালাম আজাদ তালুকদারের নাম। প্রথম অধ্যায়ে থাকবেন কাউন্সিলর হিসেবে, দ্বিতীয় অধ্যায়ে থাকবেন ডেপুটি মেয়র হিসেবে এবং তৃতীয় অধ্যায়ে থাকবেন কাহারলক হিসেবে। ইতিহাসের বইয়ে তাঁর নামে হয়ত আরো অধ্যায় রচিত হতে থাকবে।

গত ১৯ শে জুন লিমরিক সিটির কাউন্সিল অ্যাসেম্বলি হলে তৈরি হল নতুন ইতিহাস। আর সে ইতিহাসের রচয়িতা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর, সাবেক ডেপুটি মেয়র জনাব আজাদ তালুকদার। যার নামের সাথে যুক্ত হল নতুন পদবি Cathaoirleach বা মেট্রোপলিটন শহর লিমরিকের মেয়র।

নতুন Cathaoirleach

Cathaoirleach পদটি মেট্রোপলিটন ডিসট্রিক্ট মেয়রের নতুন স্থলাভিষিক্ত হয়। এই পদটি ছিল লর্ড মেয়র অফ মেট্রোপলিটন সিটি। সিটি এবং কাউন্টি কাউন্সিল মেয়রের সাথে মেট্রোপলিটন মেয়রের মধ্যে তপাত বোঝাতে Cathaoirleach পদটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিগত কয়েক টার্ম থেকে। Cathaoirleach সরাসরি আভিধানিক অর্থ চেয়ারপার্সন। কিন্তু পদটি মেয়র কিংবা চেয়ারপার্সন হিসেবে না ব্যবহৃত হয়ে শুধুমাত্র অফিশিয়ালি Cathaoirleach হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। যাকে লিডার অফ দা সিটি হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।

কাউন্সিল অ্যাসেম্বলি হল, যেখানে রচিত হয় ইতিহাস

জনাব আজাদ তালুকদারই এখন লিডার অফ দা সিটি। ২০১৯ সালে কাউন্সিলর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিহাসের অংশ হন। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের Cathaoirleach তিনি। Cathaoirleach প্রার্থীর জন্য মনোনীত হন তাঁর বিগত কয়েক বছরে কাউন্সিলর হিসেবে সাফল্যের জন্য। এর পর অন্যান্য কাউন্সিলরগন মনোনীত প্রার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচন করেন আগামীর Cathaoirleach. মোট ২০ জন কাউন্সিলর তাঁদের ভোট প্রদান করেন তন্মদ্ধে ১৩ জনই ভোট প্রদান করেন জনাব আজাদ তালুকদারকে এবং বাকি ৭ ভোট পান গ্রিন পার্টির সাসা নোভাক। প্রায় দ্বিগুণ ভোটে জয়ী হয়ে Cathaoirleach নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসের খাতায় নাম লেখালেন জাতি, ধর্ম, বর্ণের ঊর্ধ্বে প্রথম ইমিগ্রান্ট হিসেবে।

বিজয়ের পর পরিবারের সাথে। সহধর্মিণী শাহানা আক্তার, বড় মেয়ে তাসফিয়া তালুকদার এবং ছোট মেয়ে আমিরা তালুকদার

জনাব আজাদ তালুকদারের এই অর্জন শুধু তাঁর একার নয়। এ অর্জন সবার। আমরা ইমিগ্রান্ট, সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে ভিনদেশে বসবাস। আমাদের হয়ে কথা বলতে এবং আমাদেরকে রিপ্রেজেন্ট করতে বা তুলে ধরতে একটা মাধ্যম দরকার। জনাব তালুকদার আমাদের সে মাধ্যম, যার মাধ্যমে আমাদের চাওয়াগুলোকে আমাদের সুবিধা অসুবিধার কথাগুলোকে পৌঁছে দিতে সক্ষম হব দেশ নেতাদের নিকট।

লিমরিকবাসির সাথে বিজয় উদযাপন

একই দিনে জনাব তালুকদার আইরিশ বাংলা টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি এমন কিছু করে যেতে চান যা আগামীর জন্য নিদর্শন হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও প্রবাসীদের দুর্নাম হোক এমন নিদর্শন তিনি রেখে যেতে চান না। আমরাও চাই জনাব তালুকদার এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাবেন যাতে করে বহু আজাদ তালুকদার এর আইরিশ রাজনীতিতে আসার পথ যেন সুগম হয়ে উঠে।

জনাব আজাদ তালুকদারের এই পথচলা এগিয়ে যাক। মির্জা গালিবের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, ‘’এই ছুটন্ত আয়ুর অশ্ব, এবার কোথায় থামে! না আছে পায়ে রেকাব, না আছে হাতে লাগাম’’।

 

Facebook Comments Box