আয়ারল্যান্ড ছোট ভূখণ্ডের স্বল্প জনসংখ্যার একটি দেশ। এখানে বিদেশি কমিউনিটিগুলাও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র। তন্মদ্ধে বাংলাদেশি কমিউনিটিও এর অন্তর্ভুক্ত। আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশি কমিউনিটির গোড়াপত্তন খুব বেশি দিনের নয়। কিন্তু ধীরে ধীরে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশি কমিউনিটির উত্থান। এখানে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম। ধীরে ধীরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বর্ধিত হবে বাংলাদেশি কমিউনিটি।
সাত সমুদ্র তের নদীর ওপ্রান্তে বঙ্গভূমি। এই ধীর্ঘ পথ অতিক্রম করে বঙ্গ সন্তানেরা বসতি গেঁড়েছে ভিনদেশে এবং প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে নিজেদের নতুন ঠিকানা। ক্রমান্বয়ে গড়ে তুলে চলেছে প্রবাসের বুকে একখণ্ড বাংলাদেশ।
আজ থেকে কিছু বছর আগেও যা ছিল কল্পনাতীত, আজকে এসে তারই বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে বঙ্গ সন্তানেরা। বিভিন্ন সন্মানজনক পেশায় অন্তর্ভুক্তি, সফল উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে পদার্পণ করেছে আইরিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে। বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে প্রথমবারের মত আমরা পেয়েছি দুজন নির্বাচিত কাউন্সিলর, কেউ আবার লড়েছেন জাতীয় নির্বাচনেও। যা বাংলাদেশিদের জন্য সত্যিই গর্বের ও প্রশংসার।
আয়ারল্যান্ডে গড়ে উঠে চলেছে বাংলায় প্রকাশিত অনলাইনভিত্তিক সংবাদপত্র, বাংলায় মুদ্রিত ম্যাগাজিন, বাংলা ভাষায় প্রচারিত টেলিভিশন অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্পোর্টস ক্লাবসহ আরো অনেক ক্রিয়াকর্ম। এখানে হয়ে থাকে বইমেলার মত মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন। এখানে নানাবিধ ধর্মীয় উৎসব, দেশজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জমে মিলনমেলা।
আয়ারল্যান্ডের বুকে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে একখণ্ড বাংলাদেশ।
সম্প্রতি বাংলাদেশি কমিউনিটি পা রেখেছে অন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশি জাতীয় দিবসগুলা পালনের ক্ষেত্রেও পদার্পণ করতেছে ধীরে ধীরে। অস্থায়ী শহীদ মিনার পালন করে পালন করা হয়েছে ২১শে ফেব্রুয়ারি। স্বাধীনতা দিবসে ঝাঁকঝমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে স্বাধীনতা দিবস ও পতাকা উত্তোলন, যেখানে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে আইরিশ প্রশাসন। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লিমেরিক সিটি ও কাউন্টি কাউন্সিলকে সাজানো হয় লাল সবুজের আলোকসজ্জায় এবং ডাবলিনের ডানলোরী রথডাউন কাউন্টি কাউন্সিলে হয় পতাকা উত্তোলন। আয়ারল্যান্ডের মাটিতে শহীদ মিনার তৈরির জন্যও কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশি কমিউনিটি। সেদিন হয়ত খুব বেশি দূরে নয়, যেখানে থাকবে স্থায়ী শহীদ মিনার কিংবা স্মৃতিসৌধ।
বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মও রেখে চলেছে সফলতার সাক্ষর। শিক্ষাক্ষেত্রে ভালো ফলাফল করে অনেকেই আছেন আজ স্বনামধন্য কর্মক্ষেত্রে জড়িত। অনেকেই তরুণ বয়সে হয়ে যাচ্ছেন কুরআনে হাফেজ। অনেকে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও রাখতেছেন সাফল্যের সাক্ষর।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশি কমিউনিটি শুধু সংখ্যায়ই নয় মানেও বেড়ে চলেছে সমানুপাতিক হারে। এখানে দেশিয় সংস্কৃতিকে মূল্যায়ন করা হয়, এখানে স্ব স্ব ধর্মকে সমীহ করা হয়ে, এখানে দেশের ইতিহাস ও মূল্যবোধকে সন্মান জানানো হয়। আশা করি এই ধারা অব্যাহত থাকবে এবং সঠিক পথে বাংলাদেশি কমিউনিটি ধাবিত হবে।
বাংলাদেশি কমিউনিটি ছোট হতে পারে কিন্তু একতাবদ্ধতাই হচ্ছে শক্তি সঞ্চারের চাবিকাঠি। বাঙ্গালি জাতি যখনই একতাবদ্ধ হয়েছিল সফলতা তখনই এসেছিল, ইতিহাস তাই বলে। একতাবদ্ধভাবে এগিয়ে গেলে বাংলাদেশি কমিউনিটি এগিয়ে যাবে অনেক দ্রুত, অনেক দূর।
বাঙ্গালি জাতি যখনই একতাবদ্ধ হয়েছিল সফলতা তখনই এসেছিল।