আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশী ডাক্তারের ভ্যাকসিন গ্রহণ ও ভ্যাকসিনের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান

0
898
ডাঃ মুসাব্বির হুসাইন এবং ডাঃ মাহফুজুর রহমান

আজকে প্রথম বাংলাদেশী কেউ আয়ারল্যান্ডে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করলেন। দুই জনই ডাক্তার। ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কার হিসেবে উনারা এই ফাইজার/বায়োনটেক এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। উনাদের মধ্যে একজন হলেন, ডাঃ মুসাব্বির হোসাইন – মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং অন্যজন হলেন ডাঃ মাহফুজুর রহমান – যিনি এনিস হসপিটালে হেলথ সার্ভিস এক্সিকিউটিভ হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

দুইজনই আইরিশ বাংলা টাইমস এর সাথে ভ্যাকসিন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যে নানা ধরনের ভ্রম ও ভীতি তৈরি হয়েছে এবং ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক উদ্ভট গুজব উঠেছে। উনাদের ভাষ্যমতে, ভ্যাকসিন নিয়ে অহেতুক ভীতি আসলেই ভিত্তিহীন। উনারা বলেন, আমরা ডাক্তার হয়ে যদি ভ্যাকসিন নির্ভয়ে গ্রহণ করতে পারি, তাহলে সবাই তা গ্রহণ করতে সমস্যা থাকার কথা না।

ডাঃ মুসাব্বির বলেন, ‘’এই ভ্যাকসিন অন্য সব ভ্যাকসিন এর মতই, সব ভ্যাকসিনেই কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। ভ্যাকসিন গ্রহণে বড়জোর জ্বর জ্বর ভাব, ইনজেকশনের জায়গায় অল্পত্বর ব্যাথা, অবসাদ ও হালকা মাথাব্যাথা হতে পারে। যদিও হয় বড়জোর ১%-৩% এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, আর ২৪ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হবে না’’। তিনি বলেন, ‘’আমি ভ্যাকসিন নিয়েছি বেশ কয়েক ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু খারাপ কিছুই বোধ করছি না, এমনকি ভ্যাকসিন নেয়ার সময়ও সামান্য ব্যাথাটুকুও অনুভব করি নাই’’।

ভ্যাকসিন এর কারণে অ্যালার্জিজনিত জটিলতা নিয়ে ডাঃ মুসাব্বির আরো বলেন, ‘’এখন পর্যন্ত ২ মিলিয়নেরও বেশি ফাইজারের ভ্যাকসিন পৃথিবীতে রোলআউট হয়েছে যার মধ্যে কেবল ৮ জনের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা পাওয়া গিয়েছে। যাদের পাওয়া গিয়েছে পূর্বে থেকেই তাদের গুরুতর অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ছিল, যারা অ্যালার্জির কারণে পূর্বে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল’’।

ডাঃ মুসাব্বির গত সপ্তাহে ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’ এ একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান, যেখানে উল্লেখ করা হয়, ভ্যাকসিনে পলি ইথিলিন গ্লিসারল নামে একটি উপাদান রয়েছে (যেটা সাধারণত টুথপেস্ট এবং শ্যাম্পুতেও থাকে), যেটিই মূলত অ্যালার্জির কারণ। যাদের পলি ইথিলিন গ্লিসারলে অ্যালার্জি আছে তাদেরকে ভ্যাকসিন গ্রহণ না করার ব্যাপারে উপদেশ প্রদান করা হয়েছে। যাদের মাইনর অ্যালার্জি থাকে তাদের ভ্যাকসিন গ্রহণে বাধা নেই।

ভ্যাকসিনের সাইড ইফেক্ট কি করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে বেশি? আয়ারল্যান্ডের মত ক্ষুদ্র জনসংখ্যা সম্বলিত দেশেই প্রতি ৪০ জনে একজন মানুষ মারা যাচ্ছে এবং ৮% মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এখন পর্যন্ত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য মানুষের অবস্থা কারুরই অজানা নয়। মানুষের জীবন রক্ষার্থে এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন এর বিকল্প নেই।

ডাঃ মাহফুজুর রহমানেরও একই মত। উনার মতে, ভ্যাকসিন গ্রহণের ফলে কারো মৃত্যুর সম্ভাবনা তো নাইই, আর কারো সমস্যা হলেও তা মিলিয়নে এক জন হতে পারে। তিনি বলেন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষের জীবন। জীবন রক্ষার্থে ভ্যাকসিন গ্রহণ করায় কারো ভীতি থাকার কোন কারণ আছে বলে মনে করি না।

অতীতে বহু ভ্যাকসিন মানুষের জীবন বাঁচিয়ে এসেছে। বিজ্ঞানীরা এবং দেশের কর্ণধার যারা তারা নিশ্চয়ই চাইবেনা মানুষের ক্ষতি হোক এমন কিছু মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিক। তাদের নিরলস চেষ্টার ফলে ধীর্ঘ প্রতীক্ষিত ভ্যাকসিন আজ আমাদের দ্বার গোড়ায়। জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন আশা করি খুব শিগ্রই সবার জন্য সহজলভ্য হবে।

”সবার জ্ঞাতার্থে জেনে রাখা প্রয়োজন যে, ভ্যাকসিন প্রদান করার আগে কর্তৃপক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হবে। তা হতে পারে ফোন করে,চিঠি দিয়ে অথবা ইমেইল করে। তারা একটি কনসেন্ট ফর্ম পাঠাবে, যা পূরণ করে স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষরকৃত ফর্ম ভ্যাকসিন গ্রহণের দিন সাথে করে নিয়ে যেতে হবে।” 

 

 

Facebook Comments Box