আয়ারল্যান্ডে বইমেলার শুভ যাত্রা হোক নান্দনিক, হোক শ্বাশত

0
837
Shajedul Chowdhury Rubel
সাজেদুল চৌধুরী রুবেল, Irish Bangla Times

যখন দেখি সামাজিক ও রাজনৈতিক কষাঘাতে দেশ বিপর্যস্ত, ধর্মের নামে চলে রমরমা ব্যবসা তখন ঊনপঞ্চাশ বছরের প্রৌঢ় দেশটার প্রতি আমার বেশ মায়া হয় এবং ভাবি এ দেশকে নিয়ে সম্ভবত আর কোনো আশা নেই। কিন্তু পরক্ষণেই যখন দেখি বাঙ্গালি অনেক শুভ কাজেও বেশ সিদ্ধহস্ত তখন বুকটা আবারো আশায় ভরে উঠে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাঙ্গালির এমনি একটি শুভ কাজ, এমনি একটি নান্দনিক অনুষ্ঠান যা আশার আলো জাগিয়ে হৃদয়কে সতেজ ও ভরপুর করে তুলে। টানা এক মাস ধরে চলে এ মেলা। ভাষার জন্য প্রায় দিয়েছে এবং ঐ ভাষাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কোনো মেলা মাস ব্যাপী চলতে পারে তা আমাদের দেশ ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হয় বলে আমার জানা নেই। অচিরেই এ মেলা বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

এ মেলা একদিনে আজকের অবস্থানে পৌঁছে যায়নি। এর পেছনে রয়েছে এক বিরল ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের যে বীরত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে সেই স্মৃতিকে অম্লান রাখতে পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্ত রন্জন সাহা নামের এক ভদ্রলোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের উপর ৩২টি বই সাজিয়ে সর্ব প্রথম বই মেলার সূচনা ঘটান। এরপর আর পিছু তাকাতে হয়নি। সেই ৩২টি বইয়ের ক্ষুদ্র মেলা কালানুক্রমে বাংগালির স্বনামধন্য মেলায় পরিণত হয়েছে।এ মেলা আজ শুধু দেশের ভেতরই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের দেয়াল ডিঙ্গিয়ে পাড়ি জমিয়েছে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তারই অনুসরণক্রমে প্রথম বারের মতো এবার আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হচ্ছে “অমর একুশে গ্রন্থ মেলা”।

এ সমাজে কিছু মানুষ আছেন যারা নতুন কিছু নিয়ে ভাবেন, নতুন নতুন পথ প্রদর্শন করেন। তাদেরকে বলা হয় পথ প্রদর্শক। আয়ারল্যান্ডস্থ বাঙ্গালি সমাজে এমনি কিছু পথ প্রদর্শক আছেন যাদের বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তা, সুনিপুণ পরিকল্পনা ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বইমেলার মতো একটি মহতী অনুষ্ঠান আজ আয়ারল্যান্ডের মাটিতে আজ উদযাপিত হয়েছে।

পথপ্রদর্শনকারী এ শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদের জানাই আমার শুভকামনা ও প্রণতি।

বাবু চিত্তরঞ্জন সাহার যে মেলা ৩২ টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো তা আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আয়ারল্যান্ডে আয়োজিত আজকের এ মেলাও একদিন বট বৃক্ষে পরিনত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

বাংগালির এ প্রানের মেলায় উপস্থিত হতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য ও গর্বিত মনে করছি। বইমেলার এ যাত্রা হোক শুভ, সুন্দর,শাশ্বত ও নান্দনিক এই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

লেখাটি ডাবলিনে অনুষ্ঠিত বইমেলা উপলক্ষে লিখিত

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল

Facebook Comments Box

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here