![Jummah Lecture](https://irishbanglatimes.com/wp-content/uploads/2020/06/Jumma-550x321.jpg)
আজকের খুতবার মূল বিষয়: “ক্বিয়ামত দিবস”(পর্ব -১)
ডঃ আহমেদ আল হাব্বাস। খতিব, সোর্ডস ইসলামীক কালচারাল সেন্টার, ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।
তারিখ: শুক্রবার [৫ জিলক্বদ ১৪৪১][২৬জুন ২০২০]
আমাদের ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের মধ্যে একটি অন্যতম স্তম্ভ হলো ক্বিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। ক্বিয়ামত দিবস খুবই ভয়াবহ । সেদিন মানুষ মারাত্মক ভাবে আতংক গ্রস্থ ও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে।
ক্বিয়ামত সম্পর্কে আল্লাহ সুবাহ নাহু তায়ালা কোরআনে বলেন, “হে মানবমন্ডলী! তোমরা ভয় কর তোমাদের রব’কে; (জেনে রেখ) ক্বিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ানক ব্যাপার। সেদিন তোমরা দেখবে প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী তার আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতালের মত, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাবই কঠিন। মানুষের মধ্যে কতক আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে না-জেনে এবং সে অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের” (কোরআন ২২:১)।
কোরআনে অন্য আরেক জায়গায় মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন। “যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে- একটি মাত্র ফুৎকার। আর যমীন ও পর্বত মালাকে উত্তোলন করা হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া হবে। সেদিন যা সঙ্ঘটিত হওয়ার (কেয়ামত) সঙ্ঘটিত হয়ে যাবে। আকাশ বিদীর্ণ হয়ে শক্তিহীন ও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে।(সূরা আল-হাক্কাহ:১৩-১৬)
সেইদি মানুষ যেমনি ক্বিয়ামতের দিন পৃথিবীর শেষ দিনটি প্রতক্ষ্য করবে তেমনি প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর সময় তার জন্য ক্বিয়ামতের সমতুল্য যদিও মুসলিম হিসেবে ক্বিয়ামতের পর হাশর বা বিচারের দিনকে নিয়ে আমাদের ভয় করা উচিত।
ক্বিয়ামতের দিবসে শিঙ্গায় ফু্ঁৎকারের পর জান্নাতে এবং পৃথিবীতে কেউ জীবিত থাকবে না তবে কতিপয় ফেরেশতা ছাড়া। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে আসমান ও যমীনে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন। অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দণ্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে।”(সুরা যুমার ৩৯:৬৮)
অর্থাৎ আল কুরআনে ক্বিয়ামতের সময়ে মোট ২টি শিঙ্গাধ্বনির কথা বলা আছে। একটির মাধ্যমে মহাপ্রলয়ের সূচনা হবে, আর অন্যটির মাধ্যমে সকল মৃতরা পুনরুত্থিত হবে।
রাসুল সাঃ কে এই দুই ফুৎকারের মধ্যবর্তি সময় কত দীর্ঘ হবে সেই সময়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি শুধু বলেন “চল্লিশ” । এটা একটা ক্ষন বা কাল বা সময় মাত্র। তবে এটা কি চল্লিশ মাস নাকি চল্লিশ বছর এ ব্যাপারে আর কোন হাদিস পাওয়া যায় না।
দ্বিতীয় ফুৎকারের পর পৃথিবী এবং জান্নাতের মধ্যে বিরাট পরির্বন হবে আর এটা হবে মানুষের জন্য পরকালের শুরু।
ক্বিয়ামত দিবসে আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবর্তনের বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন: “সেই দিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশসমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে বের হয়ে আসবে।(ইবরাহীম: ৪৮)
ইসরাফিল আলাইহিস সালাম যখন দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন তখনই সব মৃতব্যক্তি জীবিত হয়ে হবে। আর এটাই পুনরুত্থান দিবস।
এই পুনরুত্থান দিবসটি হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান দীর্ঘ এক ভয়াবহ দিন।
পুনরুত্থান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-” যখনই শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখনই মানুষ কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে চলবে। তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ। কে আমাদেরকে ঘুম থেকে উঠালো? রহমান আল্লাহ তো এরই ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রাসুলগণ সত্য বলেছিলেন।” (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৫১-৫২)
প্রতিটি মানুষকেই মৃত্যু বরণ করতে হবে, তবে যে বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে তা’হলো এই মৃত্যুু হচ্ছে দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবন আর পরকালের অনন্ত কালের জীবন, এই দুই জীবনের সন্ধিক্ষন। ক্ষনস্থায়ী জীবনের শেষ আর অনন্তকাল জীবনের শুরু । যে জীবনের কোন শেষ নাই।
যেহেতু আত্বার মৃত্যু নাই তাই প্রথম ফুৎকার আর দ্বিতীয় ফুৎকারের মধ্যবর্তি সময় টুকু মানুষের আত্বা “বার্যাখ” নামক স্থানে অবস্থান করবে। অন্য ভাবে বলা যায় মানুষের মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের আগ পর্যন্ত মানুষ “বার্যাখ” নামক স্থানে অবস্থান করবে। পুন্যবান আত্বা আল্লাহর কাছে সুউচ্চ স্থানে “ইল্লিইন” নামক স্থানে ফিরে যাবে আর পাপী আত্বা “সিযযিইন” নামক স্থানে আটকা থাকবে।
এই “বার্যাখ” জীবনেই মানুষ জেনে যাবে শিংগায় দ্বিতীয় ফুৎকার দেওয়ার পর সে জান্নাতে যাবে না জাহান্নামে যাবে। জাহান্নামীরা চাইবে বার্যাখের জীবন যেন শেষ না হয়। (চলবে)
সংক্ষিপ্ত করন এবং অনুবাদক: মশিউর রহমান।