Home ইসলাম ও জীবন আজকের খুতবার বিষয় “বারযাখের জীবন”

আজকের খুতবার বিষয় “বারযাখের জীবন”

আজকের খুতবার বিষয় “বারযাখের জীবন”
MOSHIUR RAHMAN

গত জুম’য়াতে কিয়ামত দিবস এবং পূনরুত্থান দিবস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আজকে আমরা কিয়ামত এবং পূনরুত্থানের মধ‌্যবর্তী সময় (বারযাখ) নিয়ে আলোচনা করব। 

আমাদের মৃত‌্যুর আগের জীবন হচ্ছে প্রথম অংশ এবং মৃত‌্যুর পর থেকে পূনরুত্থান পর্যন্ত হচ্ছে কবর জীবন (বারযাখ) দ্বিতীয় অংশ। আর তৃতীয় অংশ হচ্ছে  পূনরুত্থান বা হাশরের ময়দান থেকে শুরু, ​যে জীবনের কোন শেষ নাই। হাশরের ময়দান থেকে কেউ যাবে জান্নাতে কেউ যাবে জাহান্নামে।

মুমিনদের জন‌্য এই দুনিয়ার জীবনের তুলনায় বারযাখের জীবন হবে অনেক সহজ পক্ষান্তরে অবিশ্বাসীদের জন‌্য বারযাখের জীবন হবে দুনিয়ার তুলনায় এক ভয়ঙ্কর আযাবের জীবন কারন মৃত‌্যুর পরের জীবন নিয়ে তাদের কোন প্রস্তুনি নেই।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,হে মুমিনগন তোমরা পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে দাম দাও বা  মূল্যবান মনে কর তবেই তোমরা বারযাখের জীবনকে সহজে পার করতে পারবে।

পাঁচটি জিনিস গুলো হলো: 

১. প্রৌঢ়ত্বের আগে যৌবনকে গুরুত্ব দাও। 

অনেকেই ভাবে বৃদ্ধ হলে হজ্জ করবে ,ইবাদত করবে ,এটা করা ঠিক না। যৌবন হারিয়ে ফেলার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। বৃদ্ধ হওয়ার আগেই মৃত‌্যু হয়ে যেতে পারে তাই যৌবনেই ইবাদত করতে হবে। 

২.  অসুস্থ্যতার আগে সুস্থ্যতার মূল্য দাও। 

অসুস্থ্যতার আগে সুস্থ্যতাকে গুরুত্ব দিতে হবে।জীবনে সাধারন অসুস্থতাও আছে আবার মানুষের বয়স যখন বাড়তে থাকে শরীরের উদ্যামও হারিয়ে যেতে থাকে। তাই সুস্থ‌্য থাকতেই ঈমানকে মজবুত করতে হবে।

 ৩. দারিদ্র্যের আগে স্বচ্ছলতাকে গুরুত্ব দাও। 

টাকা বিলাস ব্যসনের পেছনে অতিরিক্ত ব‌্যায় করলে দেখা যাবে যখন টাকার দরকার হবে তখন আখেরাতের ভালো কাজেও টাকা ব‌্যায় করা সম্ভব হবে না।

৪. অবসর কে মূল‌্য দাও।

আমাদের অবসর সময়টা যেন অবহেলায় বা আড্ডায় না কাটে। সীমা অতিক্রম না করে আনন্দ উপভোগের সাথে সাথে আল্লাহর ইবাদতেও অবসর সময়কে মূল‌্যবান করা যায়।  

৫. জীবনটাকে তুমি মৃত্যুর আগে কাজে লাগাও। 

আমরা সবাই বিশ্বাস করি মৃত‌্যু আমাদের হবেই। তাই মৃত‌্যুর আগেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে যেন মৃত‌্যুর পর আমরা ভাল থাকি।

মৃত‌্যু সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বললেন: “নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন দুনিয়া প্রস্থান ও আখেরাতে পা রাখার সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হয় তার নিকট আসমান থেকে সাদা চেহারার ফেরেশতাগণ অবতরণ করেন, যেন তাদের চেহারা সূর্য। তাদের সাথে জান্নাতের কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে, অবশেষে তারা তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বসে যায়। অতঃপর মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম এসে তার মাথার নিকট বসেন, তিনি বলেন: হে পবিত্র রুহ তুমি আল্লাহর মাগফেরাত ও সন্তুষ্টির প্রতি বের হও”। তিনি বললেন: “ফলে রুহ বের হয় যেমন মটকা/কলসি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। তিনি তা গ্রহণ করেন, যখন গ্রহণ করেন চোখের পলক পরিমাণ তিনি নিজ হাতে না রেখে তৎক্ষণাৎ তা সঙ্গে নিয়ে আসা কাফন ও সুগন্ধির মধ্যে রাখেন, তার থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘ্রাণ বের হয় ”। তিনি বললেন: “অতঃপর তাকে নিয়ে তারা আকাশের উপরে ওঠে, তারা যখনই অতিক্রম করে তাকে সহ ফেরেশতাদের কোন দলের কাছ দিয়ে তখনই তারা বলে, এ পবিত্র রুহ কে? তারা বলে: অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে সুন্দর নামে ডাকে যে নামে দুনিয়াতে তাকে ডাকা হত, তাকে নিয়ে তারা দুনিয়ার আসমানে পৌঁছে, তার জন্য তারা আসমানের দরজা খোলার অনুরোধ করেন, তাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়, তাকে প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তীরা পরবর্তী আসমানে অভ্যর্থনা জানিয়ে পৌঁছে দেয়, এভাবে তাকে সপ্তম আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়, অতঃপর আল্লাহ বলেন: আমার বান্দার দফতর ইল্লিয়্যিনে লিখ এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে দাও, কারণ আমি তা (মাটি) থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করেছি, সেখানে তাদেরকে ফেরৎ দেব এবং সেখান থেকেই তাদেরকে পুনরায় উঠাব”।

.

 তিনি বলেন: “অতঃপর তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, এরপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসবে, তারা তাকে বসাবে অতঃপর বলবে: তোমার রব কে? সে বলবে: আল্লাহ। অতঃপর তারা বলবে: তোমার দ্বীন কি? সে বলবে: আমার দ্বীন ইসলাম। অতঃপর বলবে: এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলবে: তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতঃপর তারা বলবে: কিভাবে জানলে? সে বলবে: আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাতে ঈমান এনেছি ও তা সত্য জ্ঞান করেছি। অতঃপর এক ঘোষণাকারী আসমানে ঘোষণা দিবে: আমার বান্দা সত্য বলেছে, অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করাও এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তিনি বলেন: ফলে তার কাছে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি আসবে, তার জন্য তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। তিনি বলেন: তার নিকট সুদর্শন চেহারা, সুন্দর পোশাক ও সুঘ্রাণসহ এক ব্যক্তি আসবে, অতঃপর বলবে: সুসংবাদ গ্রহণ কর যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে তার, এটা তোমার সেদিন যার ওয়াদা করা হত। সে তাকে বলবে: তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে শুধু কল্যাণই নিয়ে আসে? সে বলবে: আমি তোমার নেক আমল। সে বলবে: হে আমার রব, কিয়ামত কায়েম করুন, যেন আমি আমার পরিবার ও সম্পদের কাছে ফিরে যেতে পারি”। 

.

রাসুল সাঃ আরো বলেন: “আর কাফের বান্দা যখন দুনিয়া থেকে প্রস্থান ও আখেরাতে যাত্রার সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়, তার নিকট আসমান থেকে কালো চেহারার ফেরেশতারা অবতরণ করে, তাদের সাথে থাকে ‘মুসুহ’ (মোটা-পুরু কাপড়), অতঃপর তারা তার নিকট বসে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত, অতঃপর মালাকুল মউত আসেন ও তার মাথার কাছে বসেন। অতঃপর বলেন: হে খবিস নফস, আল্লাহর গোস্বা ও গজবের জন্য বের হও। তিনি বলেন: ফলে সে তার শরীরে ছড়িয়ে যায়, অতঃপর সে তাকে টেনে বের করে যেমন উল থেকে (লোহার) সিক বের করা হয় [লোহার সাথে উল লেগে থাকে। তখন তা ছাড়িয়ে নেয়া কষ্টকর হয়। ]।অতঃপর সে তা গ্রহণ করে, আর যখন সে তা গ্রহণ করে চোখের পলকের মুহূর্ত হাতে না রেখে ফেরেশতারা তা ঐ ‘মোটা-পুরু কাপড়ে রাখে, তার থেকে মৃত দেহের যত কঠিন দুর্গন্ধ দুনিয়াতে হতে পারে সে রকমের দুর্গন্ধ বের হয়। অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে উঠে, তাকেসহ তারা যখনই ফেরেশতাদের কোন দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখনই তারা বলে, এ খবিস রুহ কে? তারা বলে: অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম ধরে যার মাধ্যমে তাকে দুনিয়াতে ডাকা হত, এভাবে তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে যাওয়া হয়, তার জন্য দরজা খুলতে বলা হয়, কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হবে না”। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তার আমলনামা জমিনে সর্বনিম্নে সিজ্জিনে লিখ, অতঃপর তার রুহ সজোরে নিক্ষেপ করা হয়। রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয় তখন তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসে ও তাকে বসায়, তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে: তোমার রব কে? সে বলে: আমি জানি না। অতঃপর তারা বলে: তোমার দ্বীন কি? সে বলে:  আমি জানি না।

অতঃপর তারা বলে: এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলে: আমি জানি না, অতঃপর আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, সে মিথ্যা বলেছে, তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার দরজা জাহান্নামের দিকে খুলে দাও, ফলে তার নিকট তার তাপ ও বিষ আসবে এবং তার ওপর তার কবর সংকীর্ণ করা হবে যে, তার পাঁজরের হাড় একটির মধ্যে অপরটি ঢুকে যাবে। অতঃপর তার নিকট বীভৎস চেহারা, খারাপ পোশাক ও দুর্গন্ধসহ এক ব্যক্তি আসবে, সে তাকে বলবে: তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর, যা তোমাকে দুঃখ দিবে, এ হচ্ছে তোমার সে দিন যার ওয়াদা করা হত। সে বলবে: তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে কেবল অনিষ্টই নিয়ে আসে? সে বলবে: আমি তোমার খবিস আমল। সে বলবে: হে রব কিয়ামত কায়েম কর না”।

অর্থাত অবিশ্বাসীরা চাইবে যেন কিয়ামত সংগঠিত না হয়।

[ আমরা যদি অবিশ্বাসীদের মত নিজের খেয়াল খুশি মত জীবন পরিচালনা করি ,নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান‌্য দিয়ে দুনিয়া উপভোগে ব‌্যস্ত সময় পার করি তাহলে অবিশ্বাসীদের মতই হবে আমাদের অবস্থা ]

ডঃ আহমেদ আল হাব্বাস, খতিব, সোডর্স ,ডাবলিন ,আয়ারল‌্যান্ড।

অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত করন: মশিউর রহমান।
সোডর্স ,ডাবলিন ,আয়ারল‌্যান্ড।

তারিখ: [শুক্রবার ,৩ জুলাই ,২০২০][ ১২ জিলক্বদ ১৪৪১]

Facebook Comments Box