অরণ্য খান জাকারিয়ার অনন্য কৃতিত্ব

BT Young Scientist বিজয়ী হিসেবে অরণ্যের আফ্রিকা সফর

0
834

অরণ্য খান জাকারিয়া, ২০২১ সালে BT Young Scientist Award এর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে Special Category তে বিজয়ী হন। তারই ধারাবাহিকতায় বিজয়ীদের Self Help Africa ‘র তত্ত্বাবধানে এবং Irish Aid এর স্পন্সরশীপে আফ্রিকার জাম্বিয়াতে শিক্ষামূলক ও অভিজ্ঞতামূলক ভ্রমণের আয়োজন করে। সে ভ্রমণে অন্যান্য বিজয়ীদের সাথে অরণ্য খান জাকারিয়া স্মরণীয় ও মর্যাদাপূর্ন এই ভ্রমণের সৌভাগ্য অর্জন করেন।

BT Young Scientist and Technology Exhibition এর 2021 সালে অরণ্য অংশগ্রহণ করে Social and Behavioural Sciences বিভাগে বিশেষ অংশগ্রহণ করে এবং “The Development Of Racial Prejudice In Children’’ এর উপর প্রজেক্ট জমা দিয়ে Special Category তে বিজয়ী হন। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্যাটাগরির পর সবচেয়ে ভালো প্রজেক্টগুলো স্পেশাল ক্যাটাগরি হিসেবে স্বীকৃত হয়।

প্রজেক্টে তত্ব উপাত্তের মাধ্যমে অরণ্য তুলে ধরে সামাজিক প্রভাব কিভাবে একজন শিশুর চিন্তাধারা ও আচরণে বর্ণ বৈষম্যের দিকে প্রভাবিত করে। সাথে সাথে তিনি তুলে ধরেন কিভাবে এটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সবাইকে তিনি জানাতে চেয়েছে আসলে বর্ণ বৈষম্য কি? তিনি মনে করেন কোন শিশুই জন্মগতভাবে তাঁর ত্বকের বর্ণ বা সৌন্দর্য অন্য শিশুর চেয়ে অধিক বা কম নিয়ে পৃথিবীতে আসে না। এটি ধীরে ধীরে সমাজে আমাদের আচার আচরণের মাধ্যমে মনের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। তিনি এই প্রজেক্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন কিভাবে একজন শিশু কিশোর আমাদের সমাজে চলে আসা মানুষের মনের মধ্যে ভুল দৃষ্টিকোণকে মোকাবেলা করবে।

আফ্রিকা সফর

প্রতিবছরের বিজয়ীদেরকে সাধারণত প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশে অভিজ্ঞতার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোভিডের কারণে বিগত কয়েক বছর ভ্রমণ স্থগিত ছিল। যার কারণে ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের বিজয়ীদেরকে একসাথে ২০২৩ সালে আফ্রিকার জাম্বিয়াতে ভ্রমণ করানো হয়।

ভ্রমণ থেকে ফিরে অরণ্য খান জাকারিয়া অনেক উচ্ছ্বসিত ওঁ আনন্দিত। তিনি জানান, ‘’এ ভ্রমণ তাঁর জন্য ছিল অনেক আনন্দদায়ক ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এ ভ্রমণের মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন সে দেশের সংস্কৃতি, জীবনধারা, পরিবেশ, প্রকৃতি, শিক্ষা ব্যবস্থা ও ইতিহাস’’। আরও পরিচিত হয়েছেন, সেখানকার আবহাওয়া, জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের বিষয়ে। শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে অভিজ্ঞতা নিয়েছে কীভাবে সেখানে কৃষিকাজ করা হয়। আরণ্য সেখানকার প্রকৃতি ও বন্য প্রাণীদের দেখে অভিভূত হন।

অরণ্য আরও জানান, ভ্রমণে যে শুধু আফ্রিকা বিষয়ক অভিজ্ঞতাই অর্জন করেছেন তা নয়, তাঁর সুযোগ হয়েছে অন্যান্য বিজয়ীদের সাথে পরিচিত হওয়ার। শেয়ার করেছেন একে অন্যের অভিজ্ঞতা। শিখতে পেরেছেন অন্যদের প্রজেক্ট সম্পর্কে, যা অরণ্যকে সুযোগ করে দিয়েছে নতুন কিছু জানার ও শেখার।

আইরিশ টাইমসে প্রকাশিত অরণ্যের ভ্রমণ বিষয়ক আর্টিক্যালঃ https://www.irishtimes.com

লিমেরিক পোস্টে প্রকাশিত অরণ্যের ভ্রমণ বিষয়ক আর্টিক্যালঃ https://www.limerickpost.ie

অরণ্য সুযোগ পেয়েছেন সেখানকার শিশু ও শিক্ষার্থীদের সাথে মেশার। জানতে পারেন সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা। যা অরণ্যকে দিয়েছে ভিন্নরকম এক অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ।

কে এই অরণ্য খান জাকারিয়া?

লিমেরিক নিবাসী জনাব জাকারিয়া খান ও মাতা শিউলি খানের দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে অরণ্য হচ্ছে বড় মেয়ে। অরণ্য ২০০৬ সালে ৩ মাস বয়সে আয়ারল্যান্ড আসেন। লিমেরিকের Castletroy College, থেকে সাফল্যের সাথে লিভিং চার্ট পরীক্ষা সম্পন্ন করে University College Dublin (UCD) তে Computer Science, Sociology & Economics এ অধ্যয়নরত।

অরণ্য ভবিষ্যতেও ক্রিয়েটিভ কিছু করার ইচ্ছাপোষণ করেন। কমিউনিটির অন্য কোন ছাত্রছাত্রী যদি এমন কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চায় তাহলে অরণ্য তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি চান সুযোগ পেলে সবাইকে এই সুযোগ নেয়া উচিত।

অরণ্যের বাবা জনাব জাকারিয়া খান মেয়ের এই সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি মেয়ের এই সাফল্যে গর্বিত। তিনি জানান, ”ছেলেমেয়েদের কথা বাবা মায়ের শোনা উচিত। ছেলেমেয়ের যেকোনো কাজে বাবা মায়ের এগিয়ে আসা ও সহায়তা করা উচিত’’।

মেয়ের ভ্রমণের ব্যপারে তিনি জানান, ”আমার মেয়ে কোন একদিন এমনিতেই প্রয়োজনের তাগিদে দূরে অবস্থান করবে। সুতরাং কয়েকদিনের জন্য অন্য দেশে ভ্রমণ করতে তাকে উৎসাহিত করা আমাদের কর্তব্য। এতে সে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তা হয়ত আমরা বাসায় বসিয়ে রাখলে সম্ভব হত না’’। তিনি আরও জানান, সব বাবা মায়েরই উচিত ছেলেমেদেরকে শোনা ও তাদেরকে সাহায্য করা।

অরণ্যর মা, শিউলি খানও মেয়ের এ সাফল্যে গর্বিত। যেকোনো ছেলেমেয়ের সাফল্যের পেছনে মায়ের অবদান অপরিসীম।

অরণ্য খান জাকারিয়ার বাবা মা মেয়ের ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য সবার নিকট দোয়া কামনা করেন।

ব্রিটিশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি BT গত ২০ বছর যাবৎ আয়ারল্যান্ডে তরুণ বিজ্ঞানী তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকায় নিজেদের স্পন্সর হিসেবে যুক্ত রেখেছে। এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করার বয়স সীমা ১২ থেকে ১৯ বছর।

Facebook Comments Box