অভিনন্দন হে অগ্রণী

0
569

গত ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২২ রবিবার অনুষ্ঠিত হলো অল বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অব আয়ারল‌্যান্ড সংক্ষেপে আবাই এর দ্বিতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন জনাব ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার।

নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জনাব ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদারকে জানাই আমার প্রানঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তিনি আয়ারল‌্যান্ডে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে একজন জনপ্রিয় ব‌্যাক্তিত্ব, অন্তত এই নির্বাচনের পরে একথা বলা যেতেই পারে।

নির্বাচনের কয়েকদিন পর আমি জনাব ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদারকে ফোন করি তাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন‌্য তবে আমার মনে একটা সংশয় ছিল কিন্তু তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে দুটি রিং হওয়ার পরই আমার ফোন answer করেন। আমরা সালাম বিনিময় করি এবং অত‌্যন্ত সাবলিল ভাবে তিনি আমার শুভেচ্ছা গ্রহন করে আমাকে ধন‌্যবাদ দেন এবং বেশ কিছুক্ষন আমার সাথে তিনি কিছু বিষয়ে কথা বলেন । তার এই সৌহার্দপূর্ণ ব‌্যাবহারে আমি খুশি। প্রত‌্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একজন নেতার আচরণ এমনটাই হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি ।

এখানে একটা কথা উল্ল‌্যেখ না করলেই নয়, তা হলো আমি জনাব ডাঃ সাহেবকে তার একটা নির্বাচনী সভায় তাকে কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ পাই। তিনি যেহেতু প্রত‌্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রথম প্রাক্তন সভাপতি তাই জবাবদিহিতার দিক থেকে তার কাছে জনগনের কিছু প্রশ্ন ছিলো, আমি সেই প্রশ্ন গুলো তাকে করি এবং তিনি তার মতো করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন। আমি মনে করি অনেক ভোটার সেইদিন তার উত্তরে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ১১তারিখ ভোট দিয়েছেন। অন‌্যদিকে আমি কেন সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমানের নির্বাচনী সভায় তাকে সমান সংখ‌্যক প্রশ্ন করি নাই এই জন‌্য নাকি সমালোচকগন আমার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান প্রত‌্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সভাপতির পদে কখনই ছিলেন না, তাহলে জবাবদিহিতার দিক থেকে তার কাছে কি প্রশ্ন থাকবে? কোন প্রশ্ন না থাকাটাই স্বাভাবিক এই কথাটা আমাদের বুঝা উচিত।

নির্বাচন প্রসঙ্গে আসি, গত ১১ই সেপ্টেম্বরের গভীর রাতে Redcow Moran হোটেলে যখন নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা হয় তখন জনাব সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে পরাজয় বরণ করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সকলের হৃদয় জয় করে নেন। তবে এই বছর ২০২২ এর নির্বাচনে ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার জয় পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু এই জয় তার জন‌্য খুব সহজ ছিলনা। বিরোধী পক্ষ থেকে নিক্ষেপ করা আক্রমনের স্পর্শকাতর ইস‌্যু গুলো মোকাবেলা করতে তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তবে তিনি ও তার নির্বাচনী পরিচালনা পর্ষদ অত‌্যন্ত দক্ষতার সাথে এই স্পর্শকাতর ইস‌্যু গুলো মোকাবেলা করে সাধারন জনগনকে বুঝিয়ে জনগনের সমর্থন তাদের পক্ষে নিতে পেরেছেন। জনাব ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার অত‌্যন্ত সৌভাগ‌্যবান কারন তার নির্বাচনী পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মী বাহিনী অত‌্যন্ত সুসংগঠিত, পরিশ্রমী ও দৃঢ়চেতা। তাদের সকলের সম্মিলিত অক্লান্ত পরিশ্রমে ও ঘামে আজকের এই বিজয়।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও বলতে হয়, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরেও ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদারের কিছু সমর্থক মিডিয়ার বিরুদ্ধে রং লেপন করেছেন এবং বিভেদকে জিইয়ে রাখতে চেয়েছেন, কিন্তু কেন? তারা কি জনাব ডাঃ সাহেবের পক্ষে কমিউনিটিতে ঐক‌্য গড়তে চান না? ডাঃ জিন্নুরাইনের নির্বাচন পরবর্তি পথকে মসৃণ না রেখে ঐক‌্যের পথকে তারা বাধাগ্রস্থ করছেন, কেন?

সত‌্যি কথা হলো নির্বাচনের সময় সবার আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে, কারও বেশি কারও কম। মানুষের আগে পরের কার্যকলাপে, লেখায় ও কথায় বোঝা যায় কে কার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। কেউই নিরপেক্ষ ছিল না। নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই, কারন আমরা মানুষ। আমরা ছোট্ট একটা কমিউনিটিতে বাস করি সবাই সবাইকে চিনি। দিন শেষে আমাদের নীতি নৈতিকতা ঠিক আছে কি না এটাই হচ্ছে আসল কথা।

যাই হোক, এবছর ২০২২ সালের ABAI এর ২য় নির্বাচনে জনাব ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার দ্বিতীয়বার জয় লাভ করে প্রমান করেছেন তিনিই যোগ‌্যতর। যোগ‌্যতর না হলে জনগন আবার তাকে ভোট দিত না এটাই স্বাভাবিক তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে তার প্রতিদ্বন্দ্বি জনাব সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান তিনি মাত্র ৪৯ ভোটে হেরেছেন অর্থাৎ তিনি প্রায় সমান সংখ‌্যক ভোট পেয়েছেন। দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়ে তার দায়িত্ব এখন আরও অনেক গুন বেড়ে গেলো এবং নির্বাচন কালীন দ্বন্দ্ব বিভেদ থেকে কমিউনিকে তুলে এনে একতাবদ্ধ করাই হবে তার জন‌্য বড় চ‌্যালেঞ্জ। এই কাজটা করতে পারলে আগামী তিন বছরে কিছু কাজ তিনি করতে পারবেন।

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা যারা কমিউনিটিতে বাস করেন তারা যদি সবার সাথে ডাঃ জিন্নুরাইনের দিকে এগিয়ে আসেন তবেই কমিউনিটিকে ঐক‌্যবদ্ধ করা সহজ হবে এবং অনেক কঠিন কাজ সহজ হয়ে যাবে কারন আমাদের মূল সমস‌্যা গুলোর সমাধান করতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সহযোগীতা আমাদের দরকার । অন‌্যদিকে সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান অবশ‌্যই এগিয়ে আসবেন বলে আমি বিশ্বাস করি কারন গত ১১সালের নির্বাচনের পরও তিনি ডাঃ সাহেবের সাথে অনেক কাজ করেছেন।

প্রত‌্যক্ষ ভোটে যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তাদের সহযোগীতা করা কমিউনিটির সকলের নৈতিক দায়িত্ব, তা না হলে ৬৩% ভোটার যারা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন তাদের প্রতি অবিচার করা হবে, হবে অন‌্যায়। মানুষ কিছু পাওয়ার আশায় ভোট দিয়েছেন আর নব-নির্বাচিত কার্যকরী কমিটি যদি সকলের সহযোগীতা না পায় তাহলে তাদের দ্বারা কোন কাজ সফল ভাবে করা সম্ভব নয় এটা আমরা সকলেই জানি। একটা কথা আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, নব-নির্বাচিত কমিটিকে আমরা সহযোগীতা করবো আমাদেরই স্বার্থে, আমাদের ভবিষ‌্যত প্রজন্মের স্বার্থে। আর আমাদের যাদের সহযোগীতা করার সুযোগ আছে তারা যদি সহযোগীতা না করি তাহলে মানুষ আমাদের একদিন কাঠগড়ায় দাড় করাবে। একে অন‌্যের গায়ে ট‌্যাগ লাগানোর কালচার থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে, আমরা অনেক পিছিয়ে পরেছি, এখন আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। ১১ই সেপ্টেম্বর আমরা পেছনে ফেলে এসেছি, সেইদিনই আমাদের সকল দ্বন্দ্ব শেষ। নির্বাচন নিয়ে আর কোন দ্বন্দ্ব আমরা দেখতে চাই না শুনতেও চাই না।

নির্বাচিত হয়ে জনাব ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার বলেছেন, “যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন এবং যারা আমাকে ভোট দেন নাই, আমি আপনাদের সকলের সভাপতি, আমি আপনাদের সকলের সহযোগীতা চাই এবং সকলকে নিয়ে কাজ করতে চাই। ” তিনি সুন্দর কথা বলেছেন। এখন আমরা যদি তাদের সহযোগীতা না করি তাহলে মেয়াদ শেষে তাকে জবাবদিহিমূলক প্রশ্ন করার অধিকার আমাদের থাকবে না।

সব শেষে নির্বাচন কমিশনকে একটা ধন‌্যবাদ দিতে চাই কারন সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তারা একটা চমৎকার, স্বচ্ছ, সুন্দর নির্বাচন আমাদের উপহার দিয়েছেন। এবারের নির্বাচনের একটা উল্ল‌্যেখযোগ‌্য দিক ছিল সকলের সম্পৃক্ততা। প্রত‌্যেক কাউন্টিতে মানুষ নিজেরাই ভোট দিয়েছেন, আবার নিজেরাই ভোট গুনেছেন। এবং নির্বাচন কমিশন একই দিনে নির্বাচনী ফল ঘোষণা করেছেন, এটা ছিল এক অসাধারন কাজ। আশা রাখি আগামী তিন বছর পর ২০২৫ সালে পরবর্তি নির্বাচন আরও সুন্দর ও উৎসবমুখর হবে ইনশা’আল্লাহ।

আবারও নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জনাব ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদারকে জানাই অভিনন্দন, অভিনন্দন হে অগ্রণী।

”মশিউর রহমান”

Facebook Comments Box