গতকাল ১৫ই মে রবিবার ২০২২,আয়ারল্যান্ডের DCU ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটির Stokes Building এ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল প্রবাসী বাঙ্গালীদের বহুল প্রতিক্ষীত প্রানের মেলা “২১শে বই মেলা২০২২”।
আয়ারল্যান্ডের প্রথম বইমেলা ২০২০ সালের পর ২০২১ সালে করোনার কারনে কোন বই মেলা হয়নি তাই এবছর বই মেলা নিয়ে উপস্থিত মানুষের মাঝে বেশ উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে আয়োজনের চেষ্টায় কোন কমতি ছিলনা। বই মেলার পাশাপাশি আগত মানুষদের জন্য প্রায় সকল বিনোদনের আয়োজন রাখা হয় আর তাই সকল প্রবাসী বাঙ্গালীরা তাদের বাঙ্গালীয়ানা প্রকাশের মধ্য দিয়ে একটা সুন্দর দিন অতিবাহিত করেন।
আয়োজনের মধ্যে ছিলো:
বই মেলার মূল আকর্ষণ বইয়ের স্টল সাজানো বড় পরিসরে মেলা প্রাঙ্গন। এবারের মেলায় একটি বাচ্চাদের বইয়ের স্টল ছিল এবং ছিল ইসলামী বইয়ের একটি বেশ বড় স্টল।
বইয়ের স্টলের পাশে প্রদর্শিত হয় আয়ারল্যান্ড প্রবাসী চিত্রশিল্পী জেবুন নাহার অনুর মনোমুগ্ধকর চিত্রকর্মের প্রদশর্নী।
বাচ্চাদের জন্য ছিলো চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা। বিপুল সংখ্যক বাচ্চাদের এই প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে দেখা যায়।
আয়োজনের মধ্যে ছিলো বাংলাদেশ নিয়ে বিষয় ভিত্তিক রচনা প্রতিযোগীতা। এই রচনা প্রতিযোগীতায়ও উল্ল্যেখযোগ্য কিশোর কিশোরী অংশ নেয়।
বই মেলার মূল ভেন্যূতে সুন্দর করে তৈরী করা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বই মেলাকে আলোকিত করা আগত চারজন কবি ও কথাসাহিত্যিকদের নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মেহেদী হাসান।
এবারের মেলায় কবি ও কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি ইশরাত আরা লাইজু, কবি ও কথাসাহিত্যিক মেহেদী হাসান, কবি ও লেখিকা লতা ওসমানী এবং কবি ও লেখক ডাঃ জিন্নুরাইন জাইগীরদার।
এবারের বই মেলায় একটি ছোট্ট পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। সাথে ছিল রসগোল্লা চমচম আর নানান সাধের মিষ্টির দোকান। ছিল পান্তা ইলিশ ও চটপটির স্টল। ছিল প্যাকেট করা বিরিয়ানী। তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বাচ্চাদের দেওয়া হয় গুডিব্যাগ।
এবারের বই মেলায় একটু ভিন্নতা আনার জন্য দর্শকদের জন্য রাখা হয় পোশাকের স্টল।
দুপুর ২টার মধ্যে মেলা প্রাঙ্গন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
আগত মানুষদের নিয়ে বই মেলার মূল ভেন্যূর বিল্ডিংয়ের নিচতলায় জোহরের নামাজের একটি বড় জামাতের পর সকলকে বইমেলার আড্ডায় মেতে উঠতে দেখা যায়।
বেলা ২:৩০মিনিটে বই মেলা প্রাঙ্গনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন এবং বইয়ের স্টল ঘুরে দেখেন বাংলাদেশী কমিউনিটির গর্ব আমাদের সবার প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় এমিরিটাস প্রফেসর জনাব এম এস জে হাসমি।
বেলা ৩টায় ডাবলিন শহরের মাননীয় মেয়র Alison Gilliland এর আগমনের পর শুরু হয় মেলার মূল আনুষ্ঠানিক পর্ব। Stokes Building এর অডিটরিয়ামে তিল ধারনের ঠা্ঁই ছিলনা। বিপুল পরিমান আগত অতিথিদের সামনে স্বাগত বক্তব্য দেন মেলার প্রধান আয়োজক ও সংগঠক জনাব সৈয়দ মুস্তাফিজুর রহমান, তিনি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং লর্ড মেয়রকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বক্তব্য রাখেন প্রফেসর জনাব এম এস জে হাসমি, তিনি তার বক্তব্যে ভাষা শহীদদের স্বরণ করেন। এরপর বক্তব্য রাখেন বই মেলার প্রধান অতিথি ডাবলিন শহরের মাননীয় মেয়র Alison Gilliland. মেয়র বলেন, বাংলাদেশীদের দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, পোশাক ও মজাদার খাবার নিয়ে আয়োজিত এই মেলা খুবই প্রশংসনিয় এবং তাকে আমন্ত্রন জানানোর কারনে তিনি বাংলাদেশী কমিউনিটিকে ধন্যবাদ জানান। এর পর মেয়র বইয়ের স্টল ও মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে দেখেন ও আগত অতিথিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
২১শে বই মেলায় আরও উপস্থিত ছিলেন লিমরিক সিটির ডেপুটি মেয়র জনাব আজাদ তালুকদার এবং ডাবলিন সাউথ Sandyford এলাকার কাউন্সিলর জনাব কাজী মোস্তাক আহমেদ ইমন। আয়োজক কমিটি এই দুইজন অতিথিকে মাননীয় মেয়রের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তারা দুজন মঞ্চের প্রথম সারিতে মেয়রের পাশের আসনে বসে পুরো অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সারা দিনই প্রতিটি বইয়ের স্টলে ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়। এবারের মেলায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দর্শকসমাগমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন আয়োজকেরা।
বিকেল ৪:৩০মিনিটে Stokes Building এর অডিটরিয়ামে শুরু হয় সংস্কৃতীক অনুষ্ঠান এবং আগত অতিথিদের একটা বিড়াট অংশ এই সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।
এবার ২১শে বই মেলা ২০২২ এর মূল আয়োজকদের মধ্যে যারা ছিলেন তারা হলেন, সৈয়দ মুস্তাফিজুর রহমান, মুহাম্মদ মুস্তফা, চুন্নু মাতবর, আরিফ ভূ্ঁইয়া, মেহেদী হাসান, আব্দুল জলিল, বেলাল হোসেন শ্যামল, শায়লা শারমীন, সাজিলা চৌধুরী, আক্তার হোসেন, সৈয়দ জুয়েল, গোলাম মোর্শেদ কামরুল, সাহাদাৎ হোসেন, মাসুদ শিকদার, মামুন মীর, শামীম আহমেদ সাগর, কাজী অপু, আসিফ হোসেন হিরন, কবির আহমদ, সালাহউদ্দিন সোয়েব, রুনা জলিল এবং মশিউর রহমান।
বইয়ের মেলা মানে জ্ঞানের মেলা, বই মেলাই একমাত্র স্থান যেখানে দল মত নির্বিশেষে সকল মানুষ এক ছাতার নিচে আসে। এবারের বইমেলায় পাঠক- পাঠিকা, লেখক সহ আগত সকল মানুষ একসঙ্গে স্থানীয় বাংলাদেশিদের গল্প আড্ডায় সময় পার করতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে প্রাণবন্ত এই মেলায় সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বইমেলাকে সফল করে তোলে বলে জানান আয়োজক জনাব সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান এবং আগামী বছর ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে এ বইমেলা আয়োজন করার প্রত্যয় নিয়ে সমাপ্ত হয় এবারের আয়ারল্যান্ডের একুশে বইমেলা।
মশিউর রহমান । ডাবলিন।আয়ারল্যান্ড।